ফ্যাসিবাদ কোনো ব্যক্তি নয়, মানসিক রোগের নাম

 

ফ্যাসিবাদ: কোনো ব্যক্তি নয়, এটি এক ধরনের মানসিক রোগ

ফ্যাসিবাদ একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ, যা স্বৈরাচারী শাসন, রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, গণতন্ত্রের সংকোচন এবং ভিন্নমতের প্রতি কঠোর দমননীতি অনুসরণ করে। এটি শুধু একটি শাসনব্যবস্থা বা রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং একটি মানসিক প্রবণতাও বটে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্লেষক ও সাংবাদিক জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, 

ফ্যাসিবাদ কোনো ব্যক্তি নয়, মানসিক রোগের নাম


মুল খবর 

"ফ্যাসিবাদ কোনো ব্যক্তি নয়, এটি এক ধরনের মানসিক রোগ"—এই বক্তব্য নিছক বাক্যচাতুরী নয়, বরং বাস্তবতা। ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে আমরা দেখতে পাই, ফ্যাসিবাদ শুধু একনায়কদের নয়, বরং অনুসারীদের মনোজগতেও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।

এই প্রবন্ধে আমরা বিশ্লেষণ করব, ফ্যাসিবাদ কেবল একজন শাসকের ব্যক্তিগত আচরণ নয়, বরং এটি একটি গভীর সামাজিক ও মানসিক প্রবণতা, যা মানুষের চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ন্ত্রণ করে।


ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

ফ্যাসিবাদ শব্দটির উৎপত্তি ইতালীয় শব্দ "Fascismo" থেকে, যার অর্থ শক্তি ও ঐক্যের প্রতীক। এটি মূলত একটি স্বৈরতান্ত্রিক রাজনৈতিক মতবাদ, যেখানে একনায়কতন্ত্র, উগ্র জাতীয়তাবাদ, বিরোধী কণ্ঠ দমন এবং রাষ্ট্রীয় শক্তির সর্বোচ্চীকরণ লক্ষ্য করা যায়।

ফ্যাসিবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—

  1. একনায়কতন্ত্র ও ব্যক্তিপূজা: ফ্যাসিবাদী শাসকরা নিজেদের সর্বশক্তিমান মনে করে এবং জনগণকে তা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে।
  2. গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবসান: ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠ রোধ করা হয় এবং গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
  3. রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহার: প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহার করা হয়।
  4. ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি: বিরোধীদের ‘রাষ্ট্রের শত্রু’ বা ‘ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দমন করা হয়।
  5. সংস্কৃতি ও ইতিহাসের বিকৃতি: অতীতের গৌরবগাঁথা অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হয়, যাতে শাসকগোষ্ঠীর বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
  6. সংখ্যালঘু ও দুর্বলদের ওপর দমনমূলক নীতি: ফ্যাসিবাদী শাসন প্রায়ই ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে।

ফ্যাসিবাদ: ব্যক্তি নাকি মানসিক রোগ?

ফ্যাসিবাদের বিকাশ শুধু একজন নেতার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে না; বরং এটি একটি সমাজের সামষ্টিক মানসিক প্রবণতার প্রতিফলন। যখন একটি সমাজে গণতন্ত্রের চর্চা কমে যায়, জনগণ নিজেদের চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং শাসকের অন্ধ অনুসারী হয়ে যায়, তখনই ফ্যাসিবাদ গড়ে ওঠে।

অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, ফ্যাসিবাদ কেবল একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ নয়, এটি একটি মানসিক রোগের মতো আচরণ করে। বিশেষ করে, নেতৃত্ব ও অনুসারীদের মধ্যে এটি মানসিক বৈকল্যের লক্ষণ দেখা যায়।

ফ্যাসিবাদী শাসকের মানসিক অবস্থা

ফ্যাসিবাদী নেতারা সাধারণত নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (NPD) বা আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিত্ব বৈকল্যে ভোগেন। তারা মনে করেন, তারা সবকিছুতে সঠিক, তাদের বিরোধিতা করা অন্যায়, এবং জনগণ তাদের সেবা করার জন্যই জন্ম নিয়েছে।

ফ্যাসিবাদী নেতাদের মানসিক বৈশিষ্ট্য:

  • নিজেদের অমোঘ ও অপরিহার্য মনে করা
  • বিরোধীদের দমন করা
  • ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যেকোনো কিছু করা
  • জনগণের আবেগ ও ভয়কে ব্যবহার করা

ফ্যাসিবাদী অনুসারীদের মানসিক অবস্থা

একজন স্বৈরশাসকের উত্থান তখনই সম্ভব, যখন জনগণের একটি বড় অংশ তার সমর্থনে অন্ধ হয়ে যায়। অনুসারীদের মধ্যে "অবচেতন দাসত্ব প্রবণতা" কাজ করে, যেখানে তারা নিজেরাই মনে করে যে শক্তিশালী নেতার শাসনেই তারা নিরাপদ।

ফ্যাসিবাদী অনুসারীদের বৈশিষ্ট্য:

  • স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে ভয় পাওয়া
  • নেতার প্রতিটি কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস করা
  • বিরোধীদের প্রতি চরম ঘৃণা পোষণ করা
  • "আমরা বনাম তারা" নীতিতে বিশ্বাস রাখা

ফ্যাসিবাদের ভয়ংকর পরিণতি

ফ্যাসিবাদ যখন সমাজে শেকড় গাঁথে, তখন সেটি শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুর্যোগও ডেকে আনে। ইতিহাসের আলোকে দেখা যায়, ফ্যাসিবাদের কারণে—

  1. গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ: হিটলারের নেতৃত্বে নাজি জার্মানিতে ছয় মিলিয়ন ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল।
  2. গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মৃত্যু: মুসোলিনির ইতালিতে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয় এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের হত্যা করা হয়।
  3. অর্থনৈতিক বিপর্যয়: 
সুত্র
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

nativ ad